মানিয়ে চলো মেয়ে মানিয়ে চলো

"মানিয়ে চলো মেয়ে, মানিয়ে চলো"
বিয়ের পর এই "মানিয়ে চলা" কথাটা কয়েক কোটি বার শুনতে হয়।
স্বামী বকা দেয়, মানিয়ে চলো।
স্বামী মারে, মানিয়ে চলো।
স্বামী সন্তান নিতে চায়না, মানিয়ে চলো।
স্বামী এক্ষুনি সন্তান নিতে চায়, সন্তান নাও এবং মানিয়ে চলো।
স্বামী বলেছে চাকরী ছেড়ে দিতে বা চাকরী করা যাবে না, হও তুমি পিএইচডি হোল্ডার, মানিয়ে চলো।
স্বামী কথা দিয়েছিলো, বিয়ের পর পড়তে দিবে কিন্ত এখন তার ইচ্ছা নেই, মানিয়ে চলো।
শ্বশুর বাড়ির লোকজন মানসিক বা শারীরিক ভাবে অত্যাচার করে, মানিয়ে চলো।
স্বামী পরকীয়া করে, সবই জানো, আরে পুরুষ একটু আধটু এসব করে, তাও মেয়ে হিসেবে "মানিয়ে চলো
মানিয়ে চলো, মানিয়ে চলো, মানিয়ে চলো" কারন সময় আছে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মানে, কি ঠিক হবে? এই স্বভাবের পরিবর্তন হবে নাকি মানিয়ে চলতে চলতে একদিন সব সহ্য হয়ে যাবে বা সময়ই ফুরিয়ে যাবে।
স্বামীর আয় আশানুরূপ নয় কিন্ত দুজন মিলে তার মাঝেই সুখী থাকা মানে মানিয়ে চলা।
স্বামী কাজের কারনে দুশ্চিন্তায় আছে, তাকে সাহস দিয়ে তার পাশে দাঁড়ানো মানে মানিয়ে চলা।
নিজেদের যতটুকু সামর্থ্য তার বাইরে কোন অন্যায় আবদার না করা মানে মানিয়ে চলা। এসব ব্যাপারে যত পারেন মানিয়ে চলুন দেখবেন সম্পর্ক কতো শক্তিশালী হয় কিন্ত উপরের উল্লেখিত ব্যাপারে মানিয়ে চলা মানে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া।
অনেকে বলে বাবা মায়ের কাছে আবার বোঝা হতে চাই না তাই মুখ বুজে সব সহ্য করি। বোঝা হতে কে বলেছে!
প্রতিটা মানুষের তার পড়ালেখা এমন পর্যায় পর্যন্ত করা উচিৎ যাতে তাকে কারো ঘাড়ের বোঝা হতে না হয়, বা অন্যায়ের সাথে মানিয়ে নিতে না হয়।
কেউ আপনাকে মানসিক বা শারীরিক ভাবে অত্যাচার করছে আর সেই সময় কেউ যদি আপনাকে বুদ্ধি দেয় যে মানিয়ে চলো, সময় আছে সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই "শুভাকাঙ্ক্ষী" ব্যক্তির থেকে ১০০০ হাত দূরে থাকুন।কারন যেদিন মার খেতে খেতে মরে যাবেন সেই দিন তাদের টনক নড়বে কিন্ত তখন আর সময় নেই, আপনার সময় ফুরিয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে খবরে দেখেছিলাম এক গৃহবধূর লাশ পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হয়েছে যে কিনা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো, আরেক জনের লাশ পাওয়া গেছে সুটকেস এর ভেতরে সেও নাকি অন্তঃসত্ত্বা ছিলো।
একদিনে তো তাদের এই অবস্থা হয়নি, তারা তাদের পরিবারকে বা আপনজনের কাউকে নিশ্চয় বলেছিলো তাদের সাথে অত্যাচারের কথা। এরপর থেকে তারা হয়তো "মানিয়ে চলো"এমন বুদ্ধি মেনেই চলছিলো।কিন্ত আফসোস এই মানিয়ে চলা তাদের শেষ রক্ষা করতে পারলো না, জীবন দিয়ে সেটা প্রমান করতে হলো যে দেখো তোমাদের এই "মানিয়ে চলো" সূত্র কাজ করেনি।
আর আপনার এই মানিয়ে চলা দেখবে আপনার সন্তানরা, ছেলে ভাববে আমার মা মানিয়ে চলছে এমন আচরনের সাথে তার মানে আমিও আমার স্ত্রীর সাথে এমন আচরন করবো কারন এটাই সঠিক, আর মেয়ে সন্তান ভাববে, আমার উপর অত্যাচার হলেও আমাকে এইভাবেই মানিয়ে চলতে হবে! যেটা মনে হয় না আমরা কেউই চাই না।
যখন কেউ এমন অত্যাচার বা অবিচারের শিকার হয় অনেকেই আবার বলে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করতে। জানেন তো, সৃষ্টিকর্তা তাদেরকেও সাহায্য করেন না, যে ব্যক্তি নিজেকে সাহায্য করে না।
তাই, নিজেকে নিজে সাহায্য করুন। সবকিছু কপালের উপর ছেড়ে দিবেন না, নিজের অধিকার নিজে বুঝে নিন। কারন জীবন একটাই। সময় আছে, সব ঠিক হয়ে যাবে এই চিন্তা করতে করতে দেখবেন চুল পেকে গেছে, জীবনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন আর ফলাফল শুণ্য।
তাই সমঝোতা তখন করুন, যেখন সেটা আসলেই সমঝোতা করার পর্যায়ে পরে। কিন্ত অন্যায়ের সাথে আপোষ করবেন না বা তার সাথে সমঝোতা করবেন না। কারন আপনি পরে পরে মার খেলে বা একেবারে মরে গেলে এই শুভাকাঙ্ক্ষীদের বুদ্ধি কোন কাজে আসবে না, নিজের উপর অন্যায়ের প্রতিবাদের দায়িত্ব আপনার নিজেরই। পড়ালেখার কোন বিকল্প নেই, নিজের দায়িত্ব চোখ বন্ধ করে অন্যের হাতে তুলে দিবেন না, নিজেকে ভীত শক্ত করুন আর মানিয়ে চলুন না "মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে বাঁচুন"

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাক্ষসী। পর্ব-১

প্রথম প্রেমপত্র

বুঝতে পারা