পোস্টগুলি

ক্ষুদ্র আশাবাদ

পৃথিবী থেকে মানব সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যাবে। আর সেটা ঘটবে আমাদের ধারণাকৃত সময়ের অনেক আগেই। পিছিয়ে পড়া তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমরা আরো আগে ধ্বংস হব। প্রাকৃতিক বিপর্যয় তো আছেই, কিন্তু আমাদের ধ্বংসের জন্য প্রকৃতির দিকে চেয়ে থাকতে হবে না, মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের কারণেই আমরা আগেভাগে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। অবশ্য বিপর্যয়ের বাকি তেমন কিছু নেই। আর একজন ব্যক্তি হিসেবে আপনি বা আমি এর পরিবর্তনের জন্য কিছুই করতে পারবো না। কোন কিছুতে কোন পরিবর্তন আনতে পারবো না। বিভিন্ন এক্টিভিজমের মাধ্যমে নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারবো এই ভেবে যে আমি অনেক কিছু করে ফেলছি, কিন্তু আসলে ফলাফল শূন্য।  প্রকৃতির যে বারোটা আমরা বাজিয়ে রেখেছি সারা বিশ্ব জুড়ে, সেটার অবস্থা এখন এমন যে, চাইলেও আর পিছিয়ে আসা সম্ভব না। এর নিয়ন্ত্রণ আর আমাদের হাতে নেই।  উন্নত বিশ্বের দেশ গুলো হয়তো তুলনামূলক বেশি সময় ধরে টিকে থাকবে তাদের উন্নত নাগরিক ব্যবস্থাদির কারণে। কিন্তু আমাদের মত দেশ গুলোর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে। মানবসৃষ্ট বিপর্যয় আর অব্যবস্থাপনা আমাদের ধ্বংস তরাণ্বিত করবে। আমাদের কোন প্রতিষ্ঠান ঠিক নেই। কোন মানুষ ঠিক নেই।...

আকাশগঙ্গা (পর্ব-৩)

আকাশের মায়ের দাদু মারা যায়। সেই উদ্দেশ্যে তারা গ্রামে যাচ্ছে। আকাশ, তার বাবা-মা, তার দুই খালা, দুই মামা এবং তাদের পরিবারসহ। মৃত ব্যাক্তিকে নিয়ে কারো তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই। আবেগও নেই। শুধুমাত্র আকাশের মা এবং তার খালা কিছু সময় পর পর স্মৃতিচারন করে কেঁদে উঠছেন। সেই কান্নাও খুব ক্ষণস্থায়ী এবং কমজোর। এতটুকু না কাঁদলে মৃত ব্যাক্তিকে দেখতে যাচ্ছেন কেউ বলবে না। বরং উৎসব বলে মনে হবে। এখনো উৎসবের চাইতে কম কিছু মনে হচ্ছে না। সবার ছোট বাচ্চা কাচ্চা গুলো খেলাধুলায় ব্যস্ত। বয়স্ক এবং মধ্যবয়স্ক পুরুষেরা রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যস্ত। এইরকম একটা উৎসবমুখর পরিবেশে আকাশের মা আর খালার কাঁদাকাটি একেবারে বেমানান ঠেকছে। তারা নিজেরাও সেটা বুঝতে পেরে এখন শান্ত হয়েছেন। তাদের আবেগকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। কান্নাকে গুরুত্ব না দেয়া হলে সেটা মূল্যহীন। সেই কান্না কেঁদে কোন লাভ হয় না। ওদিকে গঙ্গা গ্রামে যাচ্ছিল তার বান্ধুবির বিয়ে খাওয়ার জন্যে। গঙ্গা যখন ৯ এ পরত তখন তারা গ্রাম থেকে ঢাকা চলে আসে। এর মাঝে দুইবার তাদের গ্রামে যাওয়া হয়েছিল। শেষ গ্রামে গিয়েছিল ৪ বছর আগে। গঙ্গাদের গ্রামের নাম ছিল মধুকূপী। লঞ্চে...

আকাশগঙ্গা (পর্ব-২)

আজকে পুর্নিমা তিথি। চাঁদটাকে ইয়া বড় মনে হচ্ছে। বড় মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর একটা কারনও আছে। পৃথিবীর চারিপাশে চাঁদের গতিপথ পুরোপুরি গোল নয়। তাই কখনো কখনো চাঁদ অন্যদিনের তুলনায় পৃথিবীর একটু বেশি কাছে দিয়েই যায়। আমি আর অরুন্ধুতি নৌকার দুপাড়ে বসে আছি। নদীতে জোয়ার। ঢেউ গুলো পাড়ে বারি খেয়ে যখন ফিরে আসছে তখন নৌকাটা এসপার ওসপার হয়ে যায় খানিকটা। আমি ভয় পাই। অরুন্ধুতি পায় না। সে ঠায় বসে রয়। আমার ভয় দেখে আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসে। নদীর কাছে এলেই আমার বুকটা শুন্য হয়ে যায়। কোন এক অজানা অতীত আমাকে হাতছানি দেয়। অরুন্ধুতি নৌকার ওপাড়ে বসে থাকে সেটা আমার ভাল লাগে না। মনে হয় যেন ও আমার থেকে সহস্র মাইল দূরে। আমার উতলা হওয়া দেখে এই নির্মম মেয়ে ইচ্ছে করে ওপাড়ে বসে থাকে। নদীর পাড়ে এলেই কতগুলো আবছায়া অস্পষ্ট ছবি আমাকে আকড়ে ধরে। ভাটার টানের মতই মনে হয় নদীর পানি আমার সব কিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবুও আমি এই নদীর পাড়ে এসেই দাঁড়িয়ে থাকি। ঢেউগুলোর সাথে কথা বলি। অরুন্ধুতি তাঁরাদের কথা বুঝতে পারে, আর আমি ঢেউদের। আজকে অরুন্ধুতি লাল পাড়ের একটা সাদা শাড়ি পড়েছে। মেয়ে...

আকাশগঙ্গা (পর্ব-১)

নদীর পাশে একটা বাংলোর ছাদে, উপুড় হয়ে শুয়ে আকাশের তাঁরা দেখতে দেখতে যেই অনুভূতিটার সৃষ্টি হয় তার নাম আমি জানি না। শুধু এই সময়টার জন্য অনুভব করতে পারছি। দূরের একটা তাঁরা জ্বলছে আর নিভছে, জ্বলছে আর নিভছে। তাঁরাটির নাম অরুন্ধতি। তার পাশের বড় তাঁরাটির নাম বশিষ্ঠ। সপ্তর্ষি মন্ডলের অন্যতম এক সদস্য। অরুন্ধতি ছিল বশিষ্ঠের স্ত্রী। বশিষ্ঠের মতন সাতজন ঋষির এই সপ্তর্ষিমন্ডলটা ধ্রুবতারার চারিপাশে ঘুরছে। আমি সেই ঘুর্নন অনুভব করি না, বুঝতেও পারি না। শুধু মহাকালই সেই ঘুর্নন বুঝতে পারে। আকাশের তাঁরাগুলো সবাই ধেয়ে চলে। যতই রাত গভীর হয় পূর্ব থেকে ততই পশ্চিম আকাশের দিকে হেলে পড়ে। ঋতু পালটায় তো তাঁরার অবস্থানও পাল্টায়। পালটে যায় না শুধু সেই ধ্রুবতারাটি। সে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। কী উদ্দেশ্য তার এই স্থবিরতার তা নিয়ে আমি বড়ই চিন্তিত থাকতাম কোন একটা সময়। প্রায়শই ভাবতাম এটা কেন এমন ভাবগম্ভীর হয়ে আছে, কাছের মানুষজন হারিয়ে পাথর হয়ে যাওয়া মালীটার মতন। কিন্তু পরে জানলাম এই ধ্রুবতারাও ধ্রুব নয়। আমার মতন শতকোটি মানুষের জীবনকাল পেরিয়ে যাবে ধ্রুব তাঁরার চলে যাওয়া দেখতে হলে। শুধু মহাকালই সেই ইতিহাসের সাক্ষী। যেইদিন জানলাম ধ্রব...

শিল্পীর স্বাধীনতা

যে কোন বদ্ধ সমাজে নতুন আইডিয়া কখনোই গৃহীত হয়না। গৃহীত হওয়া পরের কথা, জন্মই হয়না। নতুন আইডিয়া বা ফরমের জন্ম দিতে গেলে যে মানসিক চর্চার দরকার হয় সেই চর্চার সুযোগ বদ্ধ সমাজে অনুপস্থিত। শিল্পী, সাহিত্যিক এবং সৃজনশীল মানুষের কাজ হচ্ছে জনতাকে ধাক্কা দেয়া। ধাক্কা দিয়ে দিয়ে তার চিন্তার ক্ষেত্র প্রশস্ত করা, তাকে মানসিক চর্চা করতে বাধ্য করা। কেবল জনতার মনোরঞ্জনের জন্য শিল্প সাহিত্য সিনেমা তৈরি হলে সেটাকে সৃজনশীলতা না বলে কপিবাজী বলাই ভালো। যদি জনতার অনুভূতির কথা ভেবে তাদেরকে তাদের রুচি অনুযায়ী জিনিস সাপ্লাই দেয়া হয়, তবে জনতার রুচির উন্নতিও হবে না, শিল্প সাহিত্যে প্রগতিও আসবে না- এক স্থানে জমাট বেধে থাকবে। অথচ সংস্কৃতি বদ্ধ পুকুর নয়,বহমান নদী। জনতাকে, তাদের রুচিকে অর্থাৎ প্রথাকে অতিক্রম করে কিছু করতে না পারলে সংস্কৃতি বদ্ধ পুকুর হয়েই থাকবে। আর কে না জানে, বদ্ধ পুকুরেই শ্যাওলা জন্মায়, পচে গলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ বদ্ধ পুকুরের মত সংস্কৃতি কোন সুস্থ সংস্কৃতি নয়। রুগ্ন ও দুর্বল সংস্কৃতি। যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতি বা আরো ভালো করে বলতে গেলে এই বাংলার 'মুসলিম বাঙালি ' সংস্কৃ...

বুঝতে পারা

আমি থাকতে চাই খুব অচেনা, রাখতে চাইতে কোন আবেগী লেনাদেনা। আমি থাকতে চাই খুব দূরে , ভালোবাসা শিখতে চাই আগুনে পুড়ে। আমি থাকতে চাই একটু একা, যাতে হয় নিজের সাথে দেখা। যদি ভালোব...

পথযুবক

আমি একজন পথযুবক। পথশিশুদের জন্য যেমন দাঁড়িয়ে আছে ১০১ টি স্বেচ্ছাসেবক, তেমনি পথযুবকদের জন্য কোন ব্যবস্থা আছে কী? আমি একজন খাঁটি ও বিশুদ্ধ পথযুবক। আমার জন্য কি বরাদ্দ আছে...