আকাশগঙ্গা (পর্ব-২)

আজকে পুর্নিমা তিথি। চাঁদটাকে ইয়া বড় মনে হচ্ছে। বড় মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর একটা কারনও আছে। পৃথিবীর চারিপাশে চাঁদের গতিপথ পুরোপুরি গোল নয়। তাই কখনো কখনো চাঁদ অন্যদিনের তুলনায় পৃথিবীর একটু বেশি কাছে দিয়েই যায়। আমি আর অরুন্ধুতি নৌকার দুপাড়ে বসে আছি। নদীতে জোয়ার। ঢেউ গুলো পাড়ে বারি খেয়ে যখন ফিরে আসছে তখন নৌকাটা এসপার ওসপার হয়ে যায় খানিকটা। আমি ভয় পাই। অরুন্ধুতি পায় না। সে ঠায় বসে রয়। আমার ভয় দেখে আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসে। নদীর কাছে এলেই আমার বুকটা শুন্য হয়ে যায়। কোন এক অজানা অতীত আমাকে হাতছানি দেয়। অরুন্ধুতি নৌকার ওপাড়ে বসে থাকে সেটা আমার ভাল লাগে না। মনে হয় যেন ও আমার থেকে সহস্র মাইল দূরে। আমার উতলা হওয়া দেখে এই নির্মম মেয়ে ইচ্ছে করে ওপাড়ে বসে থাকে।

নদীর পাড়ে এলেই কতগুলো আবছায়া অস্পষ্ট ছবি আমাকে আকড়ে ধরে। ভাটার টানের মতই মনে হয় নদীর পানি আমার সব কিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবুও আমি এই নদীর পাড়ে এসেই দাঁড়িয়ে থাকি। ঢেউগুলোর সাথে কথা বলি। অরুন্ধুতি তাঁরাদের কথা বুঝতে পারে, আর আমি ঢেউদের।

আজকে অরুন্ধুতি লাল পাড়ের একটা সাদা শাড়ি পড়েছে। মেয়েটাকে অতিমানবী মনে হচ্ছে। আকাশের চাঁদের আলোর বিচ্ছুরনে নদী আর আকাশ দূর পাড়ে মিলিয়ে যায়, কোথাও কোন এক অজানায়। দুই নীলের মাঝে পার্থক্য খুজে পাওয়া যায় না। আমি দুলতে থাকি জোয়ারের ঢেউয়ে। অরুন্ধুতিকে যেই গান গাইতে বলেছি সে তা গায় নি। অন্য একটা গান গাইছে। – তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা?

মেয়েটা কাছে এসে আমার পাশে বসল। আমি শক্ত করে ওকে আমার সাথে আকড়ে ধরি।

 

এক জনায় ছবি আঁকে এক মনে,

ও রে মন

আরেকজনায় বসে বসে রংমাখে

কয় জনা, কয় জনা,

তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা’

অরুন্ধুতির গানের সুরের সাথে কোথাও নেকড়ের ডাক মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। চাঁদনী পরশে নেকড়ে আর কুকুরগুলো হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় তাদের অতীতকে। নেকড়ে গুলোর মতন কোন এক লেখক নদীর পানিতে হাতড়ে বেড়ায়, আবছায়াগুলোকে ধরতে চায়। চাঁদের আলো পানির উপরে যখন নৃত্য করে তার মাঝে ছবিগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। পুরোটা দেখার আগেই ঢেউগুলো এসে সব ওলটপালট করে দেয়। আমি আরো শক্ত করে অরুন্ধুতিকে চেপে ধরি। যতটা সম্ভব হয়, ততটা। আজ আকাশে তারাগুলো নেই। পূর্নিমার আকাশে তারা থাকে না। হিংসে ব্যাপারটা প্রকৃতির মাঝেই কাজ করে। পুর্নিমার চাঁদের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে অনন্তনক্ষত্রবীথিকে দেখা যায় না। আর অনন্ত নক্ষত্রবীথিকে দেখতে চাইলে পূর্নিমার সৌন্দর্য দেখা যায় না। আমার বৈঠাটা কখন ফেলে দিয়েছি নিজেও জানি না।

(চলবে)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাক্ষসী। পর্ব-১

পথযুবক

প্রথম প্রেমপত্র