তিন নম্বর হাত (অজুহাত)
জাতি হিসেবে আমরা কিছুটা laid back জাতি।আমাদের হাতে অফুরন্ত সময়! কখনো খেয়াল করেছেন কিনা জানি না, যদি রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভার ব্রীজের উপর উঠেন তাহলে দেখতে পাবেন কিছু মানুষ ওভার ব্রীজের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে উদাস হয়ে কি যেনো দেখছে, আবার অনেকে পা ঝুলিয়ে বসে আছে খুবই বিপদজনক ভাবে কিন্তু তাদের চেহারাতেও সেই উদাস ভাব।
কোন পার্কে গেলে দেখা যায় কিছু মানুষ অযথাই ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক, আবার অনেকে টং দোকানে কাটিয়ে দেয় ঘন্টার পর ঘন্টা।
এতে আমার কোন সমস্যা নেই, কারন হতে পারে তারা অলস, বেকার বা কবি সাহিত্যিক বা স্পাই! তাই উদাস ভাবে হাসি হাসি মুখ করে বা গম্ভীর ভাবে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ালেও আমার কিছু আসে যায় না, তারা তো আর আমার টাকায় বাদাম কিনে খাচ্ছে না।
কিন্ত আমার সমস্যা হয় তখনি যখন দেখি আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বা সরকারের টাকায় বেতনভুক্ত সরকারী কর্মচারী বা কর্মকর্তা, সরকারী হাসপাতাল বা স্কুল কলেজে যারা কর্মরত আছেন তারা এমব উদাস ভাবে কাজ না করে খান, গল্প করেন বা ঘুমান।
একজন শিক্ষিকা পরীক্ষার হলে গিয়ে আয়েশ করে ঘুমাচ্ছেন, এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে গত কয়েকদিন হলো। আর ছবি ভাইরাল হওয়ার পর ওই শিক্ষিকা আর তার স্বামীর অজুহাত হলো যে সে নাকি অসুস্থ ছিলো কিন্তু দায়িত্বের খাতিরে সে স্কুলে যেয়ে ঘুমিয়ে গেছে অজান্তে! no big deal! seriously! আজকাল অনেকে আবার তাদের সাপোর্ট করছে।
এটা সঠিক যে তা ছবি এভাবে ভাইরাল করা ঠিক হয়নি, কিন্ত তার দায়িত্বে অবহেলা ও কোন অজুহাত দিয়ে ঢাকা যাবে না। অসুস্থ হওয়া বা ক্লান্তি ভর করা অন্যায় নয় তবে সেই ক্লান্তিকে কর্মক্ষেত্রে প্রশ্রয় দেয়া অন্যায়। অসুস্থ হলে ছুটি না নিয়ে এভাবে পরীক্ষার হলে দায়িত্বে অবহেলা করে ঘুমানো অন্যায়।
উনিতো জানেন ঘুমাক আর যাই করুক মাস শেষে বেতন তো আসবেই তাই হয়তো ঘুমাচ্ছিলেন হালকা, এরকম বাকি প্রতিষ্ঠানেও যারা ঘুমানোর জন্য বেতন পান তাদের ও মনে হয় চাকরি হারাবার ভয় নেই।
তাই তো সরকারি অফিসে কোন ফাইল সহজে টেবিল থেকে নড়ে না, সাথে আবার টেবিলের নিচের আদানপ্রদান তো আছেই।
তাই যারা একটু খানি ঘুমানোর জন্য কর্মক্ষেত্রে যান তারা দয়া করে ঘুমানোর জন্য নিজের বাসার বিছানা ব্যবহার করুন। বাংলাদেশে বেকার কিন্তু যোগ্য প্রার্থীর অভাব নেই, যারা আপনাদের মতো চাকরি পেলে দায়িত্বের সাথে যে কোন মূল্যে করতে প্রস্তুত। তাদেরকে সেই সুযোগ করে দিন,
আর তিন নম্বর হাতের (অজুহাতের) ব্যবহার বন্ধ করুন, আর কতো!
"এই ছবি দিলাম যে আসলে যারা কষ্ট করে খেটে খায় তারা যে কোন অজুহাত দেয় না শরীর খারাপের বা অন্য কিছুর সেটা বোঝানোর জন্য। একজন গর্ভবতী মা অন্য জন নতুন মা, তারা কিন্ত তাদের দুই হাতের ব্যবহারই করছে তৃতীয় হাতের নয়"
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন