তাসলিমা নাসরিনকে নিয়ে কিছু কথা

আমি ব্যক্তিগত ভাবে লেখক তসলিমা নাসরিনের সাথে অনেক ইস্যুতে দ্বিমত, এমনকি সম্পূর্ণ বিপরীত মতও পোষণ করি কোন কোন ক্ষেত্রে, কিন্তু তার মানে এই না যে, আমি তার নির্বাসিত জীবনকে মেনে নিয়েছি।

সমাজ ধর্মের নামে অত্যাচার করবে এবং নারীকে মুখবুঁজে সহ্য করে যেতে হবে – আজ ও এইরকম বর্বর সমাজ আমাদের কিন্তু সেই সমাজটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।

দেশ স্বাধীন হয়েছে, মানুষ মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছে, স্বাধীন দেশের নাগরিক সব শিক্ষিত ও আধুনিক হয়েছে, কিন্তু তার সবই তথাকথিত এবং পোশাকি। একজন চিকিৎসককে স্বাধীন দেশে সরকারী চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার হুমকি দেয়া হয় উনার মুক্তচিন্তা প্রকাশ, সমাজের কুৎসিত চেহারার উন্মোচন তথা লেখালেখির অপরাধে! উনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, কারণ কারো কারো ধর্মীয় বোধে আঘাত হানে তাদের ভাষায় -সেই নারীবাদী, নাস্তিক লেখিকার কলমের কালি।
একজন মানুষের ব্যক্তিগত আচার-আচরণ এবং জীবনবোধকে আপনারা কেন প্রভাবিত কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবেন?একটি প্রশ্ন করতে চাই সেই মৌলবাদীদেরকে-আপনাদের ধর্মবোধ এতই কি ঠুনকো এবং হাওয়া হাওয়াই যে, কেউ কিছু বললেই আপনাদের ধর্মে আঘাত লেগে তা চুরচুর হয়ে যায়, উড়ে উড়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়? কেমন ধার্মিক আপনারা? আমি কাউকেই উৎসাহিত করবো না যে, সে অন্যের ধর্ম বানিজ্য ধর্ম নিয়ে ও কোন কুৎসিত কথা বলে বা লিখে বা অসম্মান করে। পারস্পরিক সম্মানবোধ এবং মুক্তচিন্তার প্রতি সম্মান বোধ থাকলে কেউ অন্য কারো কোন বোধেই আঘাত হানার কথা না।ধর্ম বা ধর্মীয়বোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করে কেউ অন্যায়- অত্যাচার করে তা যেমন গ্রহণযোগ্য নয়,ঠিক একই ভাবে কেউ কারো ধর্ম বা ধর্মীয় বোধকে আঘাত করে সাম্প্রদায়িক মনন ও আচারের প্রকাশ করে, তাও গ্রহণযোগ্য নয়।

মুক্তিযুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধী –কই তাদের তো কেউ নির্বাসিত করে নাই! তাদেরকে তো এই দেশ থেকে বের করে দেয়া হয় নাই! তসলিমা নাসরিন কি সেই যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের থেকেও অনেক বেশী জালিম? আমাদের দেশে অনলাইনেই অনেকে চটি পেইজ চালায়, অনেকে চটি বই লিখে- সেই সব বই বাজারে পাওয়া যায়, অনেকেই প্রতিদিন ধর্ষণ করে নারীকে, অনেকেই নারীর সম্মানকে ও ভার্চ্যুয়ালি ধর্ষণ করে, সাইবার ক্রাইম ও প্রতিদিনের ঘটনা — এসব কি কারো ধর্মে আঘাত করে না? এসব কি মৌলবাদীদের ধর্মে ছুরি চালায় না? এইসব বিকৃত পশুদের নাগরিকত্ব বহাল আছে, কিন্তু তসলিমা নাসরীনকে এই দেশ থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে, উনার এই দেশে ঢোকা হারাম হয়ে গেছে! কেন???

তসলিমা নাসরীন এর কথা, আচরণ এবং লেখা মৌলবাদীদের এবংপুরুষতন্ত্রের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়, কিন্তু ঐ চটি লেখক, পর্ণো ব্যবসায়ী দের, ধর্ষকদের, সাইবার ক্রিমিনালদের বিকৃত লেখা, অপকর্ম সেইসব মৌলবাদীদের এবংপুরুষতন্ত্রের ধর্মে কোন আঘাতই হানে না, বরং সেইসব বিকৃতি এই দেশে জায়েজ, জায়েজ ঐ বিকৃত পশুদের নাগরিকত্ব! না-জায়েজ হারাম শুধু তসলিমা নাসরীন?
তিনি তো যুদ্ধাপরাধী নন, রাজাকার নন, ধর্ষক নন, চটি লেখক নন, পর্ণো ব্যবসায়ি নন, সাইবার ক্রিমিনাল নন। এই দেশে আর কত ভণ্ডামি চলবে? ব্যক্তি বিশেষে আর কত হাজার ভিন্ন নীতি চরিতার্থ করবে এই দেশের মানুষগুলো?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাক্ষসী। পর্ব-১

পথযুবক

প্রথম প্রেমপত্র