প্রথম প্রেমপত্র
আমি প্রথম প্রেমপত্র লিখেছিলাম কে.জি. ক্লাসে থাকতে। ঠিক কী লিখেছিলাম সেটা এখন মনে নেই, তবে 'তোমাকে আমার ভালো লাগে'- এই টাইপ কিছু। চিঠি দেয়ার পর লক্ষ করলাম সে আর তার বান্ধবি মিলে সিরিয়াস ভঙ্গিতে নিজেদের মধ্যে ফুসফাস করছে। চিঠির কোন প্রতিউত্তর না পেয়ে আমি বিষণ্ণ হৃদয়ে স্কুল গেটের দিকে যাচ্ছি, আমার বাবা সেখানে আমাকে নিতে এসেছে। বাবার কাছে যাবার পরেই খেয়াল করলাম,আমার পিছনে পিছনে ঐ মেয়ের বান্ধবিটি এসে হাজির।সে সরাসরি আমার বাবার কাছে সেই চিঠিটা দিয়ে বললো, "আংকেল, আরিফ আজকে 'অমুক' কে এই চিঠিটা দিছে।"
আমার তখন 'ধরণী দ্বিধা হও,ঢুকে পড়ি' টাইপ অবস্থা। বাবা হেসে হেসেই ওর সাথে কথাবার্তা বলে, আমাকে নিয়ে রওনা হল। রিকশায় যেতে যেতে আমাকে বলল, "বাবা তোমার এখনো এসব করার বয়স হয় নাই। আরো বড় হও, তখন দেখা যাবে।"
আমি প্রথম প্রেমের কবিতাটা লিখেছিলাম ক্লাস থ্রি-তে থাকতে। ক্লাসেরই একটা মেয়ের নাম নিয়ে। ঐ মেয়েকে উদ্দেশ্য করেই যে লিখেছিলাম, এমন না, শুধু নামটা নিয়েছিলাম। সেই মেয়ে ক্লাসের প্রথম দিকের ছাত্রী, আর আমি শেষ বেঞ্চের ভোম্বলদাস, কোনদিন কথাই বলিনি তার সাথে।ক্লাসের জনৈক দুষ্ট ছেলের আমার সেই কবিতা লেখা ডায়েরিটা স্যারের কাছে নিয়ে গেল। বেরসিক স্যার ক্লাসে সকলের সামনে কবিতাটা পড়ে শুনালো! সেই মেয়ে তো রেগে আগুন! কোন সাহসে আমি তাকে নিয়ে কবিতা লিখেছি! এর একটা বিহিত করতেই হবে। ক্লাস টিচারের কাছে বিচার গেল, অভিভাবক নিয়ে আসার আদেশ জারী হল।
প্রথমেই আমি যে কাজটা করলাম, কবিতা লেখা পাতাটা ছিঁড়ে ফেললাম। কিন্তু বাসাতে না বলে তো উপায় নেই। সুবিধা এতটুকুই যে,কবিতাটা নষ্ট করে ফেলাতে অন্তত আমার বাবা-মা'র পক্ষে- কী লিখেছিলাম,সেটা জানা সম্ভব হবেনা। তো আমি অনেক ভয়ে ভয়ে মা'র কাছে এসে ঘটনাটা বললাম। কিরা-কসম কেটে এটাও বললাম যে, আমি আসলে ঐ মেয়েকে নিয়ে কবিতা লিখিনি, ওর নামটা ব্যবহার করেছি মাত্র। কবিতাটা ছিঁড়ে ফেলেছি শুনে মা রাগ করে বলল, "কেন? কবিতা ছিঁড়ছ কেন? তুমি একজন কবি। যেকোন কিছু নিয়েই তুমি লিখতে পারো। কবিতা কেন ছিড়বা? ক্লাস-টিচারের সাথে আমি কথা বলব।" নিশ্চিন্ত হয়ে এবং স্বীকৃতি পেয়ে আমার 'কবি হৃদয়' তখন উৎফুল্ল!
এগুলো পড়ে, আমাকে ইঁচড়েপাকা ভাববেন না যেন। যারা একটু-আধটু কবিতা-টবিতা লেখার চেষ্টা করে, তাদের এরকম হয়। আমার একটু আগেই হয়েছিল- এই যা!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন