আওয়ামীলীগ নিয়ে কিছু কথা
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন মন্ত্রী ছিলেন, তখন তার মন্ত্রণালয়ের সাথে আমার কাজের সম্পৃক্ততা ছিল। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের উপর সবাই ত্যক্ত বিরক্ত ছিল। তার নামে নানা অভিযোগ, যেমন ধরেন তিনি ভোর ৪টা পর্যন্ত মদ্যপান করেন এবং পরের দিন দুপুর ২টার আগে ঘুম থেকে উঠেন না। ফলশ্রুতিতে মন্ত্রণালয়ে তেমন কোন কাজ হয় না। সচিবই সব কাজ চালায়ে নেন। কোন অনুষ্ঠানে সন্ধ্যার আগে দাওয়াত দিলে তিনি আসেন না। বিকেলে অফিস শেষে তার মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সব ফাইল নিয়ে তার বাসায় যান, সেখানে সেগুলো তিনি সাক্ষর করেন। তাও সবসময় করা যায় না, কারণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে সবসময় ঘিরে থাকেন। তিনি কাজ-কর্ম কিছুই করেন না। যতটুকু করেন দলের জন্য করেন, মন্ত্রণালয়ের জন্য তার সময় নাই।
এগুলা নিয়মিত শুনতাম। ভালো কথা।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে যখন মূল মন্ত্রণালয় এবং দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরানো হলো, তখন আস্তে আস্তে দেখি লোকজন তার প্রশংসা করা শুরু করল। তিনি কত ভালো মানুষ ছিলেন। দলের জন্য কত কিছু করছেন। কখনও দূর্নীতি করেন নাই। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াইছেন। নিজের সহায় সম্পত্তি বেচে বউয়ের চিকিৎসা করাইছেন। দলের বিপদে-আপদে মাঠে থাকছেন। তিনি চরম ভদ্রলোক। সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান। ইত্যাদি ইত্যাদি।
এগুলা এখন নিয়মিত শুনি। ভালো কথা।
আমি সবসময় বলি শেখ হাসিনার উচিৎ চার নেতার সন্তানদের কাছে রাখা। যোগ্য, দক্ষ, চৌকস নেতা, কর্মী, প্রশাসক, মন্ত্রী অনেক পাওয়া যায়। বিশ্বস্ত মানুষ পাওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধুর আশেপাশে অনেক বাহিনী ছিল, তাদের দক্ষতার অভাব ছিল না, কিন্তু তারা বিশ্বস্ত ছিল না। শেখ হাসিনার এই কথাটা মনে রাখা খুব জরুরী। একসময় সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ মানেই আওয়ামী লীগের সমর্থক, শেখ হাসিনার সমর্থক। এখন দেখি তাদের অনেকেই নিজেদের সরায় নিছে।
আরে আপা দেশের জন্য ১৯৯৬-২০০১-ও অনেক কিছু করছেন। লাভ কী হইছে? ঠিকই নির্বাচনে হারায় দিছে। শুধু ভালো কাজ দিয়ে সব হয় না। সৈয়দ আশরাফুল মতো কলিজা দিতে পারে, সোহেল তাজের মতো কলিজা দিতে পারে এমন লোকজন থাকা লাগে। বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীনকে ভুল বুঝে দূরে সরায় দিছিলেন, আর কাছে রাখছিলেন খন্দকার মোশতাকের মতো চাটুকার বেইমানকে। বঙ্গবন্ধুর ওই এক ভুলের মাশুল জাতি অনেক দিছে।
এমন ভুল বার বার না হওয়াই ভালো। আর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের গল্পের মূল বিষয় হইলো অর্ধেক মানুষ আপনাকে সবসময় গালি দিবে, সবসময়। নিজের কলিজা হালকা ভাপে সিদ্ধ করে ভেজিটেবল অয়েলে ভাইজা দিলেও এদের মন পাবেন না। আর বাকি অর্ধেক মানুষ আপনাকে সবসময়ই ভালোবাসবে। এদের গালি দিবেন, তাও ভালোবাসবে। যেই অর্ধেক গালি দেয়, তাদের মন পাবার চেষ্টা করে সময় নষ্ট করে লাভ নাই। বাকি অর্ধেককে ভালোবাসা দরকার, তাদের বুকে নেওয়া দরকার।
কাকে বুকে নিবেন আর কাকে বুকে নিবেন না, এটা বোঝা খুব জরুরী।
জয় বাংলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন