পোস্টগুলি

মার্চ, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আকাশগঙ্গা (পর্ব-৩)

আকাশের মায়ের দাদু মারা যায়। সেই উদ্দেশ্যে তারা গ্রামে যাচ্ছে। আকাশ, তার বাবা-মা, তার দুই খালা, দুই মামা এবং তাদের পরিবারসহ। মৃত ব্যাক্তিকে নিয়ে কারো তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই। আবেগও নেই। শুধুমাত্র আকাশের মা এবং তার খালা কিছু সময় পর পর স্মৃতিচারন করে কেঁদে উঠছেন। সেই কান্নাও খুব ক্ষণস্থায়ী এবং কমজোর। এতটুকু না কাঁদলে মৃত ব্যাক্তিকে দেখতে যাচ্ছেন কেউ বলবে না। বরং উৎসব বলে মনে হবে। এখনো উৎসবের চাইতে কম কিছু মনে হচ্ছে না। সবার ছোট বাচ্চা কাচ্চা গুলো খেলাধুলায় ব্যস্ত। বয়স্ক এবং মধ্যবয়স্ক পুরুষেরা রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যস্ত। এইরকম একটা উৎসবমুখর পরিবেশে আকাশের মা আর খালার কাঁদাকাটি একেবারে বেমানান ঠেকছে। তারা নিজেরাও সেটা বুঝতে পেরে এখন শান্ত হয়েছেন। তাদের আবেগকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। কান্নাকে গুরুত্ব না দেয়া হলে সেটা মূল্যহীন। সেই কান্না কেঁদে কোন লাভ হয় না। ওদিকে গঙ্গা গ্রামে যাচ্ছিল তার বান্ধুবির বিয়ে খাওয়ার জন্যে। গঙ্গা যখন ৯ এ পরত তখন তারা গ্রাম থেকে ঢাকা চলে আসে। এর মাঝে দুইবার তাদের গ্রামে যাওয়া হয়েছিল। শেষ গ্রামে গিয়েছিল ৪ বছর আগে। গঙ্গাদের গ্রামের নাম ছিল মধুকূপী। লঞ্চে...

আকাশগঙ্গা (পর্ব-২)

আজকে পুর্নিমা তিথি। চাঁদটাকে ইয়া বড় মনে হচ্ছে। বড় মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর একটা কারনও আছে। পৃথিবীর চারিপাশে চাঁদের গতিপথ পুরোপুরি গোল নয়। তাই কখনো কখনো চাঁদ অন্যদিনের তুলনায় পৃথিবীর একটু বেশি কাছে দিয়েই যায়। আমি আর অরুন্ধুতি নৌকার দুপাড়ে বসে আছি। নদীতে জোয়ার। ঢেউ গুলো পাড়ে বারি খেয়ে যখন ফিরে আসছে তখন নৌকাটা এসপার ওসপার হয়ে যায় খানিকটা। আমি ভয় পাই। অরুন্ধুতি পায় না। সে ঠায় বসে রয়। আমার ভয় দেখে আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসে। নদীর কাছে এলেই আমার বুকটা শুন্য হয়ে যায়। কোন এক অজানা অতীত আমাকে হাতছানি দেয়। অরুন্ধুতি নৌকার ওপাড়ে বসে থাকে সেটা আমার ভাল লাগে না। মনে হয় যেন ও আমার থেকে সহস্র মাইল দূরে। আমার উতলা হওয়া দেখে এই নির্মম মেয়ে ইচ্ছে করে ওপাড়ে বসে থাকে। নদীর পাড়ে এলেই কতগুলো আবছায়া অস্পষ্ট ছবি আমাকে আকড়ে ধরে। ভাটার টানের মতই মনে হয় নদীর পানি আমার সব কিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবুও আমি এই নদীর পাড়ে এসেই দাঁড়িয়ে থাকি। ঢেউগুলোর সাথে কথা বলি। অরুন্ধুতি তাঁরাদের কথা বুঝতে পারে, আর আমি ঢেউদের। আজকে অরুন্ধুতি লাল পাড়ের একটা সাদা শাড়ি পড়েছে। মেয়ে...

আকাশগঙ্গা (পর্ব-১)

নদীর পাশে একটা বাংলোর ছাদে, উপুড় হয়ে শুয়ে আকাশের তাঁরা দেখতে দেখতে যেই অনুভূতিটার সৃষ্টি হয় তার নাম আমি জানি না। শুধু এই সময়টার জন্য অনুভব করতে পারছি। দূরের একটা তাঁরা জ্বলছে আর নিভছে, জ্বলছে আর নিভছে। তাঁরাটির নাম অরুন্ধতি। তার পাশের বড় তাঁরাটির নাম বশিষ্ঠ। সপ্তর্ষি মন্ডলের অন্যতম এক সদস্য। অরুন্ধতি ছিল বশিষ্ঠের স্ত্রী। বশিষ্ঠের মতন সাতজন ঋষির এই সপ্তর্ষিমন্ডলটা ধ্রুবতারার চারিপাশে ঘুরছে। আমি সেই ঘুর্নন অনুভব করি না, বুঝতেও পারি না। শুধু মহাকালই সেই ঘুর্নন বুঝতে পারে। আকাশের তাঁরাগুলো সবাই ধেয়ে চলে। যতই রাত গভীর হয় পূর্ব থেকে ততই পশ্চিম আকাশের দিকে হেলে পড়ে। ঋতু পালটায় তো তাঁরার অবস্থানও পাল্টায়। পালটে যায় না শুধু সেই ধ্রুবতারাটি। সে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। কী উদ্দেশ্য তার এই স্থবিরতার তা নিয়ে আমি বড়ই চিন্তিত থাকতাম কোন একটা সময়। প্রায়শই ভাবতাম এটা কেন এমন ভাবগম্ভীর হয়ে আছে, কাছের মানুষজন হারিয়ে পাথর হয়ে যাওয়া মালীটার মতন। কিন্তু পরে জানলাম এই ধ্রুবতারাও ধ্রুব নয়। আমার মতন শতকোটি মানুষের জীবনকাল পেরিয়ে যাবে ধ্রুব তাঁরার চলে যাওয়া দেখতে হলে। শুধু মহাকালই সেই ইতিহাসের সাক্ষী। যেইদিন জানলাম ধ্রব...